হলোগ্রাফিক ডিসপ্লে- আরেকটি অপটিক্যাল ইলিউশন প্রযুক্তির ব্রেকডাউন
সেই ২০১২ সালে কোচেলা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে, হাজারো দর্শকের সামনে বিশাল এক হলোগ্রাফিক অবয়বের রূপে পারফর্ম করেন র্যাপার টুপ্যাক শাকুর– যাঁর মৃত্যু ঘটেছিল সেই পারফর্ম্যান্সের ১৬ বছর আগে। তারপর ২০১৪ সালে, বিলবোর্ড মিউজিক এ্যাওয়ার্ডে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মারা যাবার পাঁচ বছর পর লক্ষ মানুষের চোখের সামনে স্টেজে পারফর্ম করেন প্রয়াত কিং অফ পপ মাইকেল জ্যাকসন।
সেই ২০১৪ সালেই, আমাদের পাশের দেশ ভারতে, যুগের তুলনায় অনেক বেশি অগ্রসর চিন্তা থেকে দেশব্যাপী ইলেকশন ক্যাম্পেইনে ব্যাবহার করা হয় হলোগ্রাফি, যা সাধারণ মানুষের চোখে এখনও অলীক এবং অলৌকিক। এ ধরনের ইউনিক ক্যাম্পেইনের জন্যেই হয়তো সাফল্যের মুখ দেখতে পান ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সারা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি জমকালো বিশ্বমানের হলোগ্রাফিক শো আয়োজিত হয়েছে।
হলোগ্রাফি এই যুগে কোনো নতুন শব্দ নয়। শুনলে মনে অনেক ধরনের ছবি ভেসে ওঠে। সিনেমা বা সিরিজে ভিএফএক্স দিয়ে তৈরী কোনও কাল্পনিক ক্যারেক্টার বা বাতাসে ভাসমান কোনো কল্পবৈজ্ঞানিক ইন্টারফেস নয়, আজকে আমরা স্পেসিফিক্যালি কথা বলবো হলোগ্রাফি বা হলোগ্রাফিক ডিসপ্লে প্রযুক্তির লাইভ প্রোডাকশনের বেসিক কনসেপ্ট, আইডিয়া এবং প্রয়োগ নিয়ে।
সত্যি কথাটা হচ্ছে, হলোগ্রাম বলতে যা দেখি, তা আসলে ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি ছবি নয়। হলোগ্রাফি এক ধরনের স্পেশালাইজড ফিল্মিং, এডিটিং কিংবা কম্পজিটিং টেকনিক, যেখানে high powered প্রজেক্টর বা এলইডি use করে, বিভিন্ন অ্যাঙ্গলে perfect reflective mirror এবং বিশেষভাবে তৈরী সেমি-সি-থ্রু গ্লাস দিয়ে Specific একটি ভিউইং অ্যাঙ্গল ba AREA থেকে ছবি বা অ্যানিমেশনের শূন্যে ভেসে থাকার ইলিউশন, যার সাথে কালো নন-রিফ্লেক্টিভ ব্যাকগ্রাউন্ড এবং মানানসই ক্রিয়েটিভ লাইট ডিজাইনের combination করে পুরো ব্যাপারটিকে আরো বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপন করা হয়। দর্শকদের অবস্থান থেকে তাকালে দেখা যাবে এক কাল্পনিক ত্রিমাত্রিক জগতের জীবন্ত চরিত্র দাঁড়িয়ে আছে তাঁদের সামনে।
হলোগ্রাফির বিভিন্ন ধরন
কথা বলছিলাম হলোগ্রাফি নিয়ে, বর্তমানেই যা ব্যবহৃত হচ্ছে, মোস্টলি লাইভ এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন করার জন্য। অনেক বড় বড় মিউজিয়ামেও এ ধরনের হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। হলোগ্রাফি বেশ কয়েক ধরনের, আমরা তার মধ্যে বড় কিছু ক্যাটেগরি নিয়ে আলোচনা করছি।
ক. হলোগ্রাফিক ইনস্টলেশন ফর স্টেজ
প্রথমে সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল সেটাপ’এ তৈরী করা হলোগ্রাফ নিয়ে বলি, কারন বাকি ধরনগুলো এই পদ্ধতির’ই সিমপ্লিফায়েড এডিশন। এখানে শক্তিশালী প্রজেক্টর থেকে ক্যারেক্টার বা অবজেক্টের ছবি বের হয়ে তা ফ্লোরে রাখা আয়না’তে সমকোণে প্রতিফলিত হয়। তারপর সেই রিফ্লেক্টেড ছবি আরেকটি ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে সেট করা সেমি-রিফ্লেক্টিভ সেমি-সি-থ্রু গ্লাসে আবার কিছুটা রিফ্লেকশন হয়ে আংশিকভাবে দর্শকের সামনে প্রদর্শিত হয়, এবং তার বাকি অংশ কাচ ভেদ করে চলে যায়। লিক হয়ে যাওয়া ছবির অংশটি মুছে ফেলতে ব্যাকগ্রাউন্ডে নন-রিফ্লেভ অসমতল কালো ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করা হয়। ইলিউশনকে আরও এক ধাপ শক্ত করতে তার সাথে মিলিয়ে লাইট ডিজাইন করা হয়।
খ. টেবলটপ হলোগ্রাফ বা হলোগ্রাফ বুথ
প্রায় একই গ্রামারের সিমপ্লিফায়েড রূপ দেখা যায় টেবলটপ হলোগ্রাফ বা হলোগ্রাফ বুথে, যা চার দিক থেকে ঘুরে ঘুরে দেখা যেতে পারে। এই টেকনিকে ওপর থেকে নিচের দিকে টিভি, ট্যাবলেট বা মোবাইল ফোনের ডিসপ্লেতে একটা কাস্টম ভিডিও প্লে করা হয়। স্ক্রিনের আলো, সেই একই গ্রামার ব্যবহার করে, ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে সেমি-সি-থ্রু সেমি-রিফ্লেক্টিভ সারফেসের দিকে ভিডিওর প্রতিচ্ছবি পাঠিয়ে দেয়। স্ক্রিন থেকে বের হওয়া আলো দর্শকের চোখ বরাবর প্রতিফলিত হয়ে এমন একটা ইলিউশন তৈরি করে যেন মনে হয় কোনও ত্রিডি বস্তু বুথের ভেতরে বাতাসে ভেসে আছে।
গ. টুডি হলোগ্রাফিক প্রজেকশন ফয়েল
তার চেয়ে সিমপ্লিফায়েড প্রযুক্তি হচ্ছে টুডি হলোগ্রাফিক প্রজেকশন ফয়েল। কাঁচ বা এ্যাক্রিলিকের ওপর প্রায় একই ধরনের সেমি-রিফ্লেক্টিভ সেমি-সি-থ্রু ফয়েল পেস্ট করে তৈরী করা হয় হলোগ্রাফিক প্যানেল। বিশেষভাবে সেট করা প্রজেক্টর থেকে আলো বেরিয়ে হলোগ্রাফিক প্যানেলের ওপর পড়ে। প্যানেলেও ওপর পড়া কিছুটা আলো দর্শকের চোখের দিকে প্রতিফলিত হয়ে ইলিউশন তৈরি করে। প্যানেল ভেদ করে চলে যাওয়া বাকি আলো ফ্লোরের গ্লসি ম্যাটেরিয়াল দিয়ে প্রতি-প্রতিফলন করে ডিফিউজ করে উধাও করে দেয়া হয়।
ঘ. হলোগ্রাফিক ফ্যান
যে তিন ধরনের হলোগ্রাফি নিয়ে কথা বললাম, তার চেয়ে তুলনামুলক ভিন্ন আর নতুন প্রযুক্তি এই হলোগ্রাফিক ফ্যান, যা বাচ্চাদের হাতের খেলনা থেকে শুরু করে বিশাল আকৃতির এ্যডভারটাইসমেন্ট ইন্সটলেশনের ব্যবহৃত হয়, এবং ইতিমধ্যেই বাজারে রেডিমেড অবস্থায় পাওয়া যায়। হলোগ্রাফিক ফ্যানে সাধারণত চারটি ব্লেড থাকে, প্রতিটি পাখা’তে এক সারি আলট্রা-হাই রিফ্রেশ রেটযুক্ত ইন্ডিভিজুয়ালি এ্যাড্রেসেবল এলইডি পিক্সেল লাইট থাকে। ফ্যানের রোটর এত দ্রুত ঘুরতে পারে করে যে মানুষের চোখে লাইটগুলো একটা অর্ধস্বচ্ছ ডিসপ্লে প্যানেলের রূপ নিয়ে নেয়। প্রচণ্ড হাই রিফ্রেশ রেটের সাথে ফ্যানের ঘূর্ণনের সমন্বয়ের মাধ্যমেই এলইডিগুলোর সাহায্যে জেনারেট হয়ে ওঠে বাতাসে ভেসে ওঠা ছবি। এই ধরনের একাধিক ফ্যান একসাথে সিংক্রনাইজ করে বিশাল হলোগ্রাফিক প্যানেলও বানানো হচ্ছে।
ঙ. প্লাস্মা
অন্যান্য আরও অনেক ধরনের এক্সপেরিমেন্টাল হলোগ্রাফিক টেকনলজি রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ জাপানের প্লাজমা হলোগ্রাম প্রযুক্তি, যেখানে কোনও লুকোচুরি করে স্ক্রিন লুকিয়ে নয়, বরং আসলেই বাস্তবে শূন্যের মাঝে লেখা বা ছবি দেখানো যায়। এই টেকনোলজি অত্যন্ত জটিল এবং ক্রিটিক্যাল। তাই, এই বিষয়ে আমি কিছু বলে আপনাকে কনফিউজ না করে বরং একটা চমৎকার করে বানানো ভিডিও’র লিংক দিয়ে দিলাম।
বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে চিন্তার চাইতেও দ্রুতগতিতে। ডিজিটাল লার্নিং, আইডিয়া শেয়ারিং এবং কলাবরেশনের স্বর্ণযুগ চলছে। বাংলাদেশে অবস্থিত যে কোনও পেশার, যে কোনও বয়সের কারোর যদি লাইভ হলোগ্রাফিক প্রডাকশন এর ব্যাপারে জানতে আগ্রহ থাকে, বা এই ইন্ডাস্ট্রিতে হতে থাকা এই ধরনের প্রডাকশনের কন্টেন্ট, ডিজাইন কিংবা কন্সেপ্ট নিয়ে কাজ করতে চাইলে, এই লিঙ্কে ক্লিক করে আমাদের কমিউনিটি’তে জয়েন করুন। আমরা বিভিন্ন ধরনের পারফর্মার, প্রডিউসার, ডিজিটাল আর্টিস্ট ও ভিজুয়াল কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের একসঙ্গে এনে বিভিন্ন টেকনিক শেয়ারিং, কলাবরেশন ও অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে একসাথে আধুনিক সব প্রডাকশন শিখতে এবং শেখাতে চেষ্টা করছি।
আপনি আমাদের মত কেউ হলে আমরা আপনাকেও WELCOME TO THE GANG!
Editor- Abhijit Asad
Leave a Reply